somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ব্লগ দিবস

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামু'র আয়োজন নিয়া দৈনিক যুগান্তরে আজ ২১ ডিসেম্বর ২০১০
একটা লেখা ছাপা হইছে।
আপনাদের ভালো লাগবে আশা করি


Click This Link

বাংলা ব্লগ দিবস

ইকবাল খন্দকার

আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও মানুষ খুব একটা জানতো না ব্লগ ব্যাপারটা কী। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ। তারপর সবকিছু হয় বেশ দ্রুত। একেবারেই অল্প সময়ের মধ্যে ব্লগ পৌঁছে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ব্লগারের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক লাখে। এত অল্প সময়ে ব্লগের এই জনপ্রিয়তায় পৌঁছার একটাই কারণ। সেটি হল স্বাধীনতা। ব্লগারদের স্বাধীনতা। এখানে তারা নির্দ্বিধায়, নিঃসঙ্কোচে তাদের মতামত পেশ করতে পারেন। এমন অনেক লেখক আছেন যারা প্রচণ্ড ভালো লিখেন। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে পত্রপত্রিকায় তার লেখা ছাপা হয় না। বইও প্রকাশ করতে চান না প্রকাশকরা। এই প্রতিকূল অবস্থায় হতাশ হয়ে তিনি লেখালেখি ছেড়ে দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্লগ সেই পথ একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু ব্লগের ব্যাপারে অন্যরকম। বই কিংবা পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হলে যে পরিমাণ মানুষ সেটি পড়ে, ব্লগে প্রকাশিত লেখা এর চেয়ে কমসংখ্যক মানুষ তো নয়ই, বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে আরও বেশি মানুষও পড়ে থাকে। শুধু তাই নয়, পড়ার পর তারা ভালো-মন্দ মন্তব্যও করে। ভালো লাগলে যেমন ভালো লিখার জন্য সাধুবাদ জানায়, খারাপ লাগলেও তেমন কঠোর সমালোচনা করে। এতে লেখক পরবর্তী লেখাটির ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক হতে পারে। একজন লেখকের লেখালেখির জন্য এরচেয়ে ইতিবাচক আর কিছুই হতে পারে না। কারণ পত্রপত্রিকা কিংবা বইয়ে কোনও লেখা প্রকাশিত হলে সেটি পাঠকের ভালো লাগল কি মন্দ লাগল তা জানার কোনও উপায় থাকে না। লেখক হয়তো মনে-প্রাণে চান তার লেখা পড়ে পাঠক মন্তব্য করুক, আবার পাঠকও চান ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টা লেখককে জানাতে। কিন্তু কারো চাওয়া পূর্ণ হয় না। উভয়ের মধ্যে একটা দূরত্ব থেকেই যায়। সেই দূরত্বটাই দূর করে দিয়েছে ব্লগ। শুধু সাহিত্যধর্মী লেখা আর সাহিত্যবিষয়ক মন্তব্যই নয়, ব্লগজুড়ে থাকে রাজনৈতিক আলোচনা সমালোচনাও। বিশেষ করে যখন কোনও কারণে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তখন প্রায় সবগুলো পোস্টই হয়ে থাকে রাজনীতিবিষয়ক। এসব পোস্টের উদ্দেশ্য শুধু সমালোচনা করাই নয়, বরং কারো কারো লেখায় এমন গঠনমূলক বিষয় উঠে আসে, যা আমাদের রাজনীতির জন্য অত্যাবশ্যক। তবে সব আবশ্যকতাকে ছাড়িয়ে ব্লগ যে আবশ্যক কাজটি করে চলেছে তা হল ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা। একজন ব্লগার কারো দুঃখ কষ্টের চিত্র তুলে ধরে কোনও লেখা পোস্ট করলে সঙ্গে সঙ্গে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট মানুষটির দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য। রক্ত সরবরাহের কথাই ধরা যাক। শত চেষ্টা করেও যখন রক্ত পাওয়া না যায় তখন একটি মাত্র পোস্টই জোগাড় করে দিতে কাক্সিক্ষত রক্ত। বাঁচিয়ে তুলতে পারে মুমূর্ষু রোগীকে। ভ্রাতৃত্ব আর মানবতার এমন উদাহরণ সত্যিই বিরল। আর এ কারণেই ব্লগ নিয়ে গর্ব করেন শীর্ষস্থানীয় ব্লগ সাম হোয়্যার ইন ব্লগের পরিচালক সৈয়দা গুলশান আরা জানা। জানা বলেনÑ ব্লগে অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্লগারদের মন্তব্য পড়ে মনে হয় কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছেন না। মনে হয় তাদের মধ্যে পুরনো কোনও শত্র“তা আছে। তখন খুব খারাপ লাগে। মনে হয়, ব্লগটা কেবল তর্ক বিতর্ক আর ঝগড়াঝাটির জায়গা। কিন্তু তার পরক্ষণেই যখন দেখি কারো কোন বিপদে সবাই সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে, সহানুভূতি প্রকাশ করছে, তখন মনটা ভরে যায়। আসলে যারা বলে দিন দিন পৃথিবী থেকে মানবিকতা উঠে যাচ্ছে, তারা তাদের ধারণা এবং বক্তব্য বদলাতে বাধ্য হবেন ব্লগারদের মধ্যকার মানবিকতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ দেখলে। আর স্বাধীনতার বিষয়টা তো আছেই। একজন মানুষ স্বাধীনভাবে তার মনের কথা বলতে পারবে না, এটা আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনি। আর সেই চিন্তা চেতনা থেকেই বাংলা ব্লগ চালু করেছিলাম। আমার বিশ্বাস আমাদের চিন্তা চেতনা একটু হলেও বাস্তবায়িত হয়েছে।
কখনও কখনও ব্লগÑ
কাদা ছোড়াছুড়ি বলতে যা বোঝায়, কখনও কখনও ব্লগে তাই শুরু হয়। কেউ কেউ কারো লেখার ব্যাপারে এমন মন্তব্য করেন যা শ্লীলতা এবং ভদ্রতাকে ছাড়িয়ে যায়। এতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো ব্লগ। শান্তিপ্রিয় অনেকেই তখন ব্লগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ ব্যাপারে জানা বলেনÑ ভালো-মন্দ সব কিছুতেই থাকে, থাকবে। ব্লগের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তবে ব্লগাররা ইচ্ছে করলে ব্লগকে যেকোন প্রকার ত্র“টি থেকে মুক্ত করতে পারেন। এর জন্য ব্লগারদের সবাইকে সহনশীল হতে হবে। ব্লগারদের কারো কারো মধ্যে ব্যক্তি আক্রমণের বিষয়টি প্রকট। এটি অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কারণ নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে আক্রমণ করার মধ্যদিয়ে কখনও ভালো কোনকিছুর চর্চা হতে পারে না। ব্লগিংয়ের নামে সেটি তখন হয়ে যায় পরচর্চা। সবাই যদি প্রতিজ্ঞা করে ব্লগে আমরা পরচর্চা নয়, বরং সুস্থ সুন্দর এবং গঠনমূলক বিষয় আশয়ের চর্চা করবো, তাহলে ব্লগ নিয়ে কেউ ভুল করেও নেতিবাচক মন্তব্য করবে না। আরেকটা বিষয় কখনও কখনও কোন কোন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মডারেটরদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ব্লগকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখতে মটারেটরদেরও উচিত ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া। এক কথায় ব্লগকে পরিচ্ছন্ন রাখতে যা কিছু করা দরকার, সবই করতে হবে।
তবুও ব্লগÑ
নিজেদের ত্র“টির কারণে ব্লগ কখনও কখনও সমালোচনার মুখোমুখি হলেও এটা স্বীকার করতেই হবে, ব্লগের মত তারুণ্যদীপ্ত এমন মাধ্যম আর নেই। বয়সের দিক থেকে যারা বার্ধক্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন তারাও ব্লগিং করার সময় হয়ে ওঠেন দুরন্ত। কারণ ব্লগে বসে বসে ঝিমোনোর কোন সুযোগ নেই। একটি পোস্ট দিয়ে অলস হয়ে বসে থাকারও উপায় নেই। কেউ যখন পোস্টটির তীব্র সমালোচনা কিংবা প্রশংসা করে তখন বাধ্য হয়েই কী-বোর্ডে হাত দিতে হয়। যারা সারারাত নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত, তাদের এই বদ অভ্যাসও দূর করে দেয় ব্লগ। কারণ ব্লগের উত্তাপ সহজে কাউকে ঘুমুতে দেয় না। ভোর হয়ে যায় তবু শেষ হয় না ব্লগিং। দিন দিন ব্লগারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে মজবুত হচ্ছে পরষ্পরের বন্ধন। মোবাইল ফোন, ফেসবুকের বাইরে বন্ধু তৈরীর এ এক অভিনব মাধ্যম। এই প্রেক্ষাপটে গত ১৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো পালন করা হলো বাংলা ব্লগ দিবস। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সাইট সামহোয়্যার ইন ব্লগ এই দিনটি পালন করে। বিকেলে ঢাকার গুলশানে সামহোয়্যার ইনের কার্যালয়ে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে নানা বয়সী ব্লগ লেখকেরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান । সামহোয়্যার ইন ব্লগের হেড অব অপারচুনেটিস আরিল্ড ক্লোক্কেরহৌগ বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে সামহোয়্যারের যাত্রা শুরু হয়েছিল, দিন দিন এতে ব্লগারদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বাংলা ব্লগ দিবসে ব্লগারদের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দ লাগছে।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্লগাররা ব্লগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ঘটনার পাশাপাশি ব্লগের অনেক মজার ঘটনার বর্ণনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সামহোয়্যার ইন ব্লগ লেখা আহ্বান করেছিল কিছুদিন আগে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেখান থেকে ১০ জনকে সেরা লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।


ছবিটি ব্লগার তাজাকলম এর সৌজন্যে












সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৫২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×